মাদকাসক্তির প্রভাব ও প্রতিরোধ

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা | NCTB BOOK

আমাদের সমাজজীবনে মাদকাসক্তি বর্তমানে একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এটি আমাদের সামাজিক ও নৈতিক জীবনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে একজন মাদক গ্রহণকারীর হৃদরোগ, যক্ষ্মা, ক্যান্সার ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তার মানসিক স্বাস্থ্যও এর ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে। মাদক গ্রহণকারীরা হতাশা ও হীনমন্যতায় ভোগে। নিজেদের ক্ষতি তো এরা করেই, উপরন্তু ভয়, উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার শিকার হয়ে সমাজেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।

পারিবারিক জীবনে মাদকের প্রভাব নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। পুরো পরিবারের সুখ-শান্তিকে নষ্ট করে। যে পরিবারে একজনও মাদকাসক্ত সন্তান থাকে সে পরিবারে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে । প্রতিবেশীদের কাছে ঐ পরিবারের মর্যাদা থাকে না। মাদকের টাকার যোগান দিতে গিয়ে অনেক সময় পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাছাড়া হত্যা, আত্মহত্যা, বাড়ি থেকে পালানো বা নিরুদ্দেশ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। যে দেশে সহজেই মাদক পাওয়া যায় সেখানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও হত্যার ঘটনাও বেশি ঘটে। মাদকের প্রভাবে সামাজিক অস্থিরতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়। মাদকের হাত থেকে সমাজের মানুষকে রক্ষা করার জন্য তাই মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে :

 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

মাদকাসক্তি রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর। এ জন্য সমাজে নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর জন্য অভিভাবক ও পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সচেষ্ট হতে হবে। মোটকথা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে ও অন্যান্য উপায়ে মাদক বিরোধী সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় পর্যায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ক্লাব সমিতি প্রভৃতি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংস্থাগুলো নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে মাদকাসক্তি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'মাদককে না বলুন’-এই প্রতিজ্ঞায় জনগণ বিশেষ করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, পোস্টার, বিলবোর্ড ও লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমেও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। 

সুস্থ চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করে শিশু-কিশোরদের সেদিকে আকর্ষণ করতে হবে যাতে তারা মাদক গ্রহণ ও অন্যান্য খারাপ অভ্যাসের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। একই সঙ্গে অশোভন চলচ্চিত্র প্রচার বন্ধ করা দরকার। এছাড়াও মাদকাসক্তি প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনি পদক্ষেপগুলো গ্রহণ ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে আইনসমূহ:

বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকাসক্তি একটি ভয়াবহ জটিল সমস্যা। বাংলাদেশ সরকার মাদকাসক্তি প্রতিরোধে জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণের ০৩টি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে মাদক বিরোধী সার্ক কনভেনশনেও স্বাক্ষর করেছে।

বাংলাদেশ সরকার তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) সম্পর্কে সর্বশেষ বিধিমালা ২০১৩, প্রণয়ন করে তামাকজাত দ্রব্য পাবলিক প্লেসে এবং পাবলিক পরিবহনে ব্যবহার করলে এর শাস্তির বিধান রেখেছে। বিধিতে বলা হয়েছে, অফিস আদালত, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, বিমান বন্দর, নৌবন্দর, সমুদ্রবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী ক্ষেত্র, থিয়েটার হল, বিপনী বিতান, আবদ্ধ রেস্তোরা, পাবলিক টয়লেট, শিশু পার্ক, মেলা, পাবলিক পরিবহনের জন্য অপেক্ষার স্থান এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার ঘোষিত স্থান সমূহে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবেন না। শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘এই বিধান কেউ লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক ৩ শত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন ।

তামাকজাত ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের উৎপাদন ও বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেশা বা মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে । মাদক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । ছাত্রদের সামনে শিক্ষকের ধূমপানকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে । ঔষধ হিসাবে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত মাদকজাতীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
কাজ : আমাদের সমাজে মাদকাসক্তি রোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়? আলোচনা করো ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion